অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বোমা হামলার মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়েছে এবং এর পেছনে রয়েছে আমেরিকা- এমন তথ্য দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের কিংবদন্তী অনুসন্ধানী সাংবাদিক সেমুর হার্শ। গতকাল (বুধবার) নিজের ব্লগ সাবস্ট্যাকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে তিনি এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি জানান, গত সেপ্টেম্বরে বিস্ফোরণ ঘটানো হলেও পাইপলাইনে বোমা বাধা হয় জুন মাসে। মার্কিন নৌবাহিনীর ডুবুরিরা ওই মিশনে অংশ নেয়। সেসময় সেখানে ‘বাল্টপস ২২ ন্যাটো’ নামের একটি সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হয় এবং ওই মহড়ার আড়ালেই নাশকতার পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল। পাইপলাইনে বোমা বাধার মিশনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এমন একজনের বরাত দিয়ে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন সেমুর হার্শ। এ নিয়ে হোয়াইট হাউস এবং সিআইএ’র প্রতিক্রিয়া জানতে চান তিনি।
তবে দুপক্ষই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, পাইপলাইনে টাইম বোমা বেধে আসার তিন মাস পর ২৬ সেপ্টেম্বর এতে বিস্ফোরণ ঘটায় আমেরিকা।সমুদ্রের এত নিচে রিমোট সিগন্যাল না পৌঁছানোয় বিশেষভাবে পাইপলাইনের কাছে একটি সোনার বয়া মোতায়েন করা হয়। এই কাজ করে নরওয়ের নৌবাহিনী। এ নাশকতার পেছনে আমেরিকার জড়িত থাকার প্রমাণ না রাখতে নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল ওয়াশিংটন। পরিকল্পনা শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকেই। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়। প্রথমে মার্কিন নৌবাহিনী নতুন কমিশন হওয়া সাবমেরিনের সাহায্যে সরাসরি পাইপলাইনে হামলা করতে চেয়েছিল। এছাড়া, বিমান বাহিনীর তরফ থেকে পাইপলাইনের উপরে বোমা ফেলার পরামর্শও দেয়া হয়েছিল।
তবে সিআইএ এসব পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। তাদের আশঙ্কা ছিল, এগুলো আমেরিকার যুক্ত থাকার বিষয়টি প্রকাশ করে দেবে। সেমুর হার্শ জানিয়েছেন, অনেক কর্মকর্তাই হোয়াইট হাউসকে এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিআইএ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে এ কাজে আমেরিকা জড়িয়ে পড়ে।প্রথমে ওই বোমায় ৪৮ ঘণ্টার টাইমার সেট করা হয়। কিন্তু ন্যাটোর মহড়ার দুই দিনের মধ্যে এই বিস্ফোরণ হলে সবার সন্দেহ আমেরিকার দিকে যাবে- এমনটা অনুমান করে সোনার বয়া পদ্ধতি হাতে নেয়া হয়। আমেরিকা প্রথমে নিষেধাজ্ঞা এবং পরে নাশকতার মাধ্যমে নর্ড স্ট্রিম বন্ধের পরিকল্পনা করেছিল বলে দাবি করেন হার্শ। তিনি লিখেন, “আমেরিকার আশঙ্কা ছিল- রাশিয়া থেকে আসা সস্তা গ্যাস ইউরোপকে রাশিয়ার ওপরে নির্ভরশীল করে রাখবে।
ফলে তারা ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিতে গড়িমসি করতেই থাকবে।”ওই নাশকতার পরপরই একে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যা দেয় মস্কো। এরপর বেশ কয়েকবার দেশটি হামলার জন্য আমেরিকার দিকে আঙুল তোলে। তবে এই রিপোর্ট প্রকাশের আগ পর্যন্ত রাশিয়া নির্দিষ্ট করে ওয়াশিংটনকে দায়ী করেনি। অবশ্য, গত সপ্তাহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, “গত বছর রাশিয়ার নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা বিস্ফোরণের সাথে আমেরিকা সরাসরি জড়িত ছিল। আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরো ন্যাটো কীভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে।”
Leave a Reply